ঈমানের আহকাম
আমরা সাধারণ মুসলিম হিসেবে অধিকাংশই ঈমানের আরকান বা স্তম্ভসমূহ সম্পর্কে কম-বেশি জানি। কিন্তু অনেকেই হয়তো ঈমানের আহকাম সমূহ সম্পর্কে অবগত নই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা কুরাআন মাজীদে বলেছেন-
وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡن {۱۰۶}
তাদের বেশীর ভাগই আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখে, তবে তাঁর সাথে [‘ইবাদতে] শির্ক করা অবস্থায়। [১২:১০৬]
কুর’আন মাজীদ থেকে প্রাপ্ত ৯টি ঈমানের আহকাম সম্পর্কে নিচে উল্লেখিত হলো। যথা:-
১] জ্ঞান/আল-‘ইলম
فَٱعْلَمْ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسْتَغْفِرْ لِذَنۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَىٰكُمْ***
{কাজেই ***জেনে নিন} যে, {আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই}। আর ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার ও মুমিন নর-নারীদের ক্রটির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। [৪৭:১৯]
২] সন্দেহ বিহীন/আল-ইয়াক্বিন
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর {***সন্দেহ পোষণ করেনি} এবং তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই {***সত্যনিষ্ঠ}। [৪৯:১৫]
৩] পূর্ণাঙ্গভাবে/আল-ক্ববুুল
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা {***পুর্ণাঙ্গভাবে} ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্ৰ। [০২:২০৮]
৪] পূর্ণ সমর্পণ/আল-ইনক্বিয়াত
إِذْ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسْلِمْۖ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
স্মরণ করুন, যখন তাঁর রব তাকে বলেছিলেন, {***‘আত্মসমর্পণ করুন’} , তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সৃষ্টিকুলের রব-এর কাছে {নিজেকে ***সমর্পণ} করলাম’। [০২:১৩১]
৫] সত্যবাদিতা/আস্-সিদক্ব
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَكُونُوا۟ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ
হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর এবং {***সত্যবাদীদের} সঙ্গী হও। [০৯:১১৯]
৬] একনিষ্ঠতা/আল-ইখ্লাস
আল্লাহর আনুগত্যে:
وَمَآ أُمِرُوٓا۟ إِلَّا لِيَعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلْقَيِّمَةِ
আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহ্র ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে {***ইখ্লাস/একনিষ্ঠ করে} এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্ৰদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন। [৯৮:০৫]
রাসূলের আনুগত্যে:
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের/মতভেদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোন {দ্বিধাবোধ} না থাকে এবং {***সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়}। [০৪:৬৫]
৭] অটল-অবিচল/আল-ইস্তিক্বামা
إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُوا۟ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسْتَقَٰمُوا۟ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَبْشِرُوا۟ بِٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِى كُنتُمْ تُوعَدُونَ
নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের রব আল্লাহ’, তারপর {***অবিচল থাকে, তাদের কাছে নাযিল হয় ফেরেশতা [এ বলে] যে, ‘তোমরা ভীত হয়ে না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। [৪১:৩০]
وَٱعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ ٱلْيَقِينُ
আর আপনার ইয়াক্বিন[মৃত্যু] আসা পর্যন্ত আপনি আপনার রবের ইবাদাত করুন। [১৫:৯৯]
৮] মুহাব্বত/আল-হুব্বা
আল্লাহকে ভালোবাসা:
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِۗ وَلَوْ يَرَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓا۟ إِذْ يَرَوْنَ ٱلْعَذَابَ أَنَّ ٱلْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعَذَابِ
আর কোন কোন লোক আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যকে [আল্লাহর] সমকক্ষ বলে মনে করে এবং তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মত ভালবাসে, কিন্তু (যারা বিশ্বাস করেছে, তারা {আল্লাহর ***ভালবাসায় দৃঢ়তর}।) আর অন্যায়কারীরা যে সময় কোন শাস্তি প্রত্যক্ষ করে, তখন যদি বুঝত যে, সমুদয় ক্ষমতা আল্লাহর এবং আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। [০২:১৬৫]
রাসূলকে ভালোবাসা:
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষন না আমি তার নিকট তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালবাসার পাত্র হই।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
৯] ত্বগূতকে অস্বীকার
لَآ إِكْرَاهَ فِى ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشْدُ مِنَ ٱلْغَىِّۚ فَمَن يَكْفُرْ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسْتَمْسَكَ بِٱلْعُرْوَةِ ٱلْوُثْقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
ধর্মের জন্য কোন জোর-জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় সুপথ প্রকাশ্যভাবে কুপথ থেকে পৃথক হয়েছে। সুতরাং ((যে {***তাগূতকে[আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য বাতিল উপাস্যসমূহকে] অস্বীকার করবে} ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, নিশ্চয় সে এমন এক শক্ত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙ্গার নয়।)) আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। [০২:২৫৬]
উপসংহার
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত আহকাম বা অভ্যন্তরীণ ফরজসমূহ মেনে ঈমানের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। ইয়া রাব্বিল ‘আলামিন…